কখনও কখনও একপশলা বৃষ্টির দেখা মিলছে ঠিকই, কিন্তু গ্রীষ্মের দাবদাহ আর ভ্যাপসা গরম এখনও কাটেনি। আর এমন আবহাওয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বরসহ নানা অসুখে। তাই এসময় শিশুদের সুস্থ রাখতে সচেতন থাকা প্রয়োজন। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। লিখেছেন- আঞ্জুমান আরা
সর্দি-কাশি গরমের পর হঠাৎ বৃষ্টি এবং কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসতন্ত্র সহজেই সংক্রমিত হয়ে এসময় শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া ঘামে ভেজা কাপড় পরে থাকা, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করা, আইসক্রিম খাওয়ার কারণেও এসময় শিশুরা ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ :
-জ্বর
-মাথা ও গলা ব্যথা
-নাক দিয়ে পানি পড়া
-হাঁচি-কাশি
-শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
-খাওয়ার অরুচি
অভিভাবকদের করণীয় :
ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশিতে শিশুকে যতটুকু সম্ভব বিশ্রামে রাখুন। এক্ষেত্রে ঘরোয়া দাওয়াই বেশ কার্যকর। শিশুকে আদা, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে কিংবা আঙুরের রস খাওয়ালে কাশি অনেকটা কমে যাবে। সঙ্গে আদা, লেবু, পুদিনা পাতার রং চা, তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়েও খাওয়াতে পারেন। সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে থাকলে লবণ জলের পানি কিংবা ‘ন্যাজাল ডিকনজেসট্যান্ট’ এক-দুই ফোঁটা দিয়ে শিশুর নাক পরিষ্কার করে দিন। এসময় শিশুকে প্রচুর ডাবের পানি, ঘরে তৈরি শরবতসহ নানারকম তরল খাবার খেতে দিন। বুকের দুধ খাওয়া শিশুদের ঘন ঘন বুকের দুধ খেতে দিন।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে :
ঘামে ভিজেই এসময় শিশুরা বেশি ঠাণ্ডা কাশিতে আক্রান্ত হয়। তাই এসময় শিশু ঘামে ভিজে গেলে কাপড় ভিজিয়ে শরীর, চুলের গোড়া ভালো করে মুছে দিন কিংবা গোসল করিয়ে দিন। তবে বাইরে থেকে এসেই শিশুকে গোসল করান যাবে না। কিছুক্ষণ বাতাসে বসিয়ে তারপর গোসল করিয়ে দিন। এ সময় শিশুকে ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম যতটা সম্ভব কম খেতে দিন। শিশুকে দিনে কয়েকবার ভালোভাবে হাত ধুইয়ে দিন। কারণ হাত থেকেই শরীরে সব থেকে বেশি জীবাণু যায়।
শ্বাসকষ্ট :
আমাদের অনেকেরই ধারণা শ্বাসকষ্ট শুধু শীতেই বাড়ে। এমন ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। এই গরমে ঠাণ্ডা লেগেও শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বিশেষ করে শিশুদের। তাই এসময় শিশুদের যেন খুব বেশি ঠাণ্ডা না লাগে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
লক্ষণ :
* নাক দিয়ে পানি পড়া
* বুক চেপে আসা
* নাক চুলকায়
* শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
অভিভাবকদের করণীয় :
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে শিশুর পা হালকা ম্যাসাজ করে দিন। শিশু আরামবোধ করবে। শিশুকে গরম গরম চিকেন স্যুপ, বেশি বেশি পানি, তরল খাবার এবং ‘জিঙ্ক’ ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন। শিশুর নাক পরিষ্কার রাখুন। কারণ নাকে ময়লা জমে থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনহেলার ব্যবহার করান যেতে পারে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে :
শিশুরা এ সময় যাতে ধুলাবালি থেকে দূরে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বাইরে বের হলে শিশুকে মাস্ক, স্কার্ফ ব্যবহার করতে দিন যাতে ধুলাবালি নাকে-মুখে প্রবেশ না করে।
ভাইরাস জ্বর :
শিশুর ঘাম মুছে না দিলে তা শরীরে বসে ভাইরাস জ্বর হয়। আবার বৃষ্টিতে ভিজেও ভাইরাস জ্বর হতে পারে। ভাইরাস জ্বর ছোঁয়াচে। তাই পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হলে তার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
লক্ষণ :
* শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়া
* চোখ লাল হওয়া
* শরীর ব্যথা ও মাথা ব্যথা
* কাশি
* খাওয়ার অরুচি
* গলা ব্যথা ইত্যাদি
অভিভাবকের করণীয় :
ভাইরাস জ্বর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন থাকে এবং ঘরোয়া চিকিৎসাতেই শিশু সুস্থ হয়ে উঠে। তাই এই সময়টাতে কোনো এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো উচিত নয়। স্বাভাবিক পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে শিশুর পুরো শরীর স্পঞ্জ করে দিন। সেই সঙ্গে ঘরের দরজা-জানালা খুলে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। পানি, তাজা ফলের জুস, সবজি স্যুপ এ সময় শিশুকে বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি হারবাল চা, আদার রস, তুলসী পাতার রসও এসময় উপকারী- যুগান্তর