পুষ্টিবিদ এ বি সিদ্দিক নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশ কোরবানির ঈদে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সাধারণত আমাদের দেশে কোরবানির পশু হিসেবে গরু বা খাসি নির্বাচন করা হয়। মাংস কতটা স্বাস্থ্যকর খাবার, এ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ওবেসিটি একটি বড় সমস্যা, সেই সঙ্গে এসব দেশে হার্টের রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই তারা গরু বা খাসির মাংস অনেকটা এড়িয়ে চলে। এসব মাংস খেলে তারা লিন মিট বা চর্বিহীন অংশটাকে প্রাধান্য দেয়।
মাংসের ভালো দিক- মাংস আমিষপ্রধান খাবার। আমিষ ছাড়াও আছে চর্বি, নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ লবণ। আমরা যত ধরনের খাবার খাই তার ক্যালরিমূল্য, পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি ও পরিমাণ বিচারে মাংসকে সুপারফুডের তালিকায় রাখা যায়।
আমিষের অন্যতম উৎস -প্রথম শ্রেণির আমিষের অন্যতম উৎস মাংস। প্রতি ১০০ গ্রাম গরু অথবা খাসির মাংস থেকে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়। মাংসে আমিষের গুণগত মান অন্যান্য উদ্ভিজ আমিষের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যামাইনো এসিড আছে এবং শরীরে এর কার্যক্ষমতাও বেশি। সুতরাং সবার পাশাপাশি শিশুদের খাবারে আমিষের অভাবজনিত পুষ্টিহীনতা রোধে নিয়মিত মাংস থাকতে পারে। এ ছাড়া যাদের ওজন কম, তারাও সপ্তাহে কয়েক দিন মাংস খেতে পারে।
আয়রনের প্রধান উৎস- আয়রন অত্যন্ত দরকারি খনিজ লবণ। দেশের বেশির ভাগ নারী আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতায় ভোগে। মাংস আয়রনের উত্কৃষ্ট উৎস। মাংসের আয়রনকে হিম আয়রন বলে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংস প্রতিদিনকার আয়রনের চাহিদার ২৫ শতাংশ মেটাতে সক্ষম।
জিংকের অন্যতম উৎস- জিংকসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে মাংস অন্যতম। উদ্ভিজ্জ উেস খুব একটা জিংক থাকে না। লাল মাংস দেহে জিংকের অভাব পূরণ করে। জিংক মানুষের মাংসপেশি সবল করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেশের শিশু ও নারীদের প্রায় ৪০ শতাংশ জিংকের অভাবে ভোগে। খাবারের সঙ্গে লাল মাংস গ্রহণ এই অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংস শরীরের প্রতিদিনের জিংকের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম।
অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস -মাংস ভিটামিন বি-৬, নায়াসিন, ভিটামিন বি-১২ ও ফসফরাসের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংস এসব ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদার ২৫ শতাংশ মেটাতে সক্ষম। এ ছাড়া রিবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক এসিড ও সেলেনিয়ামের চাহিদা মেটায় ১০ শতাংশেরও বেশি। খাসির মাংসে এসব ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ অন্যান্য মাংসের চেয়ে বেশি থাকে।